ভালোবাসার শেষ চিঠি || ভালোবাসা গল্প || বাংলা গল্প
![]() |
ভালোবাসার শেষ চিঠি |
প্রথম দেখা
নদীর পাড়ে বসে আকাশ দেখছিল অনিরুদ্ধ। ঢেউগুলো যেন তার মনে হাজারো স্মৃতির জোয়ার এনে দিচ্ছিল। তার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছিল রূপার মুখটা।
চার বছর আগে এই নদীর ধারে প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের। অনিরুদ্ধ তখন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা তার নেশা। একদিন বসে বসে নদীর দৃশ্য আঁকছিল, হঠাৎ পাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে একটি মেয়ে বলে উঠল—
"ওই গাছটার ডাল একটু বেশি লম্বা হয়ে গেছে না?"
সে চমকে তাকিয়ে দেখে, সাদা সালোয়ার কামিজ পরা এক মেয়ে মুচকি হেসে তার ছবি দেখছে। অনিরুদ্ধ অবাক হয়ে বলে, "তুমি আঁকতে জানো?"
মেয়েটি মাথা নেড়ে বলল, "নাহ, তবে ছবির ভুল ধরতে পারি!"
এভাবেই শুরু হয়েছিল পরিচয়। মেয়েটির নাম রূপা। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব গাঢ় হতে থাকে। একসঙ্গে পড়াশোনা, গল্প, আড্ডা—সবকিছুতেই যেন তারা একে অপরের ছায়া হয়ে ওঠে।
প্রেমের রঙ
অনিরুদ্ধ আর রূপা কখনোই সরাসরি নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেনি, কিন্তু তাদের চোখ, আচরণ, সবকিছুই বলে দিত তারা একে অপরকে ভালোবাসে। এক সন্ধ্যায় অনিরুদ্ধ সাহস করে বলল,
"রূপা, তুমি যদি একদিন হারিয়ে যাও, আমি তোমাকে খুঁজে বের করব।"
রূপা একটু হাসল, "আমাকে খুঁজে পেতে হলে তোমার হৃদয়ের দিকে তাকাবে, আমি সেখানেই থাকব।"
সে রাতেই তারা বুঝেছিল, এই সম্পর্কের নাম ভালোবাসা।
বাধার দেয়াল
ভালোবাসার পথ কখনোই সহজ হয় না। রূপার পরিবার ছিল খুব রক্ষণশীল। তারা চায়নি রূপা অনিরুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুক। অনেক বাধা-বিপত্তির পরও তারা গোপনে যোগাযোগ রাখত।
একদিন রূপার বাবা জানতে পেরে কঠোরভাবে তার ফোন কেড়ে নেয়, ঘর থেকে বের হওয়াও বন্ধ করে দেয়। অনিরুদ্ধ পাগলের মতো চেষ্টা করেও কোনোভাবেই রূপার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিল না।
বিচ্ছেদের রাত
এক সন্ধ্যায় অনিরুদ্ধ একটি চিঠি পায়। চিঠিটি ছিল রূপার হাতে লেখা—
"অনিরুদ্ধ, তোমাকে ছাড়া আমার জীবন অন্ধকার। কিন্তু আমার পরিবার কখনো আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না। আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও। তাই আমি দূরে চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো।"
চিঠিটি পড়ে অনিরুদ্ধের পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে গেল। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে রূপা তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
ফিরে আসার প্রতীক্ষা
অনিরুদ্ধ অনেক খুঁজেও রূপাকে আর কখনো খুঁজে পেল না। কিন্তু সে তার অপেক্ষায় ছিল। নদীর ধারে বসে প্রতিদিন সে আকাশ দেখত, ভাবত একদিন হয়তো রূপা ফিরে আসবে।
শেষ চিঠি
পনেরো বছর পর, একদিন ডাকপিয়ন একটি চিঠি দিল অনিরুদ্ধকে। চিঠিটি ছিল রূপার—
"অনিরুদ্ধ, যখন তুমি এই চিঠি পড়বে, আমি তখন আর পৃথিবীতে থাকব না। আমি সবসময় তোমাকে ভালোবেসেছি। কিন্তু সমাজের বাধায় কখনো তোমার হতে পারিনি। জানো, আমার মেয়ের নাম রেখেছি ‘অনুরূপা’—তোমার আর আমার ভালোবাসার স্মৃতি হিসেবে।"
চিঠিটি পড়ে অনিরুদ্ধ চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগল। ভালোবাসা কখনোই হারিয়ে যায় না, শুধু সময়ের সাথে তার রূপ বদলে যায়।
(শেষ)