অভিশপ্ত বই || ভুতের গল্প || ভূতের গল্প PDF

 

অভিশপ্ত বই
অভিশপ্ত বই

একদিন সন্ধ্যাবেলা, চার বন্ধু – মিরাজ, রিমো, আলিফ, এবং মেসবা – সিদ্ধান্ত নিলো যে, তারা একটু অদ্ভুত, রহস্যময় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে। মিরাজ তাদের বললো, "শুনেছি পাশের জঙ্গলে রাতে অদ্ভুত কিছু ঘটে। সেখানে যেতে চাইলে তোমরা সবাই প্রস্তুত থাকো।"

রিমো কিছুটা ভয় পেয়ে বললো, "তোমরা জানো, সেই জঙ্গলটা অনেক দিন ধরেই লোকে ভুতুড়ে বলে। আমি তো একদম যেতে চাই না!"

কিন্তু আলিফ এবং মেসবা উত্সাহিত হয়ে বললো, "চল, মজা হবে!" মিরাজও উৎসাহিত হয়ে তাদের সঙ্গে যেতে রাজি হলো।

তারা রাতের অন্ধকারে, জঙ্গলের দিকে পা বাড়ালো। পথ চলতে চলতে মিরাজ বলে উঠলো, "তুমি কি জানো, এই জঙ্গলে অনেক আগে এক বৃদ্ধা ছিল। তিনি অনেক বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তার আত্মা এখনো এই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।"

রিমো ভয় পেয়ে বললো, "এখনই ফিরে চল, মিরাজ!"

তবে আলিফ হাসতে হাসতে বললো, "বুড়ির আত্মা? এটা শুধু পুরনো গুজব।"

মেসবা, যিনি একটু বেশিই সাহসী ছিল, বললো, "এটা আমাদের পরীক্ষা, রিমো। ভয় পেয়ে কী লাভ!"

তারা আরো কিছুদূর চলে গেলো। একসময় তাদের সামনে এক পুরনো, পরিত্যক্ত বাড়ি দেখতে পেলো। বাড়ির জানালা গুলি ভাঙা ছিল এবং ভিতর থেকে অদ্ভুত কিছু শব্দ আসছিল। মিরাজ বললো, "এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ, চলোনা ভিতরে যাই।"

তারা ভিতরে ঢুকতেই, হঠাৎ করে বাতি নিভে গেলো। ঘরটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর, মেসবা হঠাৎ শুনতে পেলো একটা সিসি সিসি আওয়াজ। তারা সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর, পেছন থেকে একটা ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা তাদের শরীরে লাগলো।

রিমো ভয় পেয়ে বললো, "এটা কি!?"

তারা সবাই মাড়াল, কিন্তু পেছন থেকে একটা সাদা রঙের, অদ্ভুত চেহারার কিছু একটা দেখতে পেলো। সেটি একদম নিঃশব্দে তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। মিরাজ বললো, "এটা... এটা সেই বৃদ্ধার আত্মা!"

তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হলো। আলিফ বললো, "দৌড়াও!"

এরা সবাই পালাতে পালাতে বাড়ির বাইরে চলে এলো। জঙ্গলের মাঝখানে চলে এসে তারা থেমে গেলো। হঠাৎ মেসবা মাটি থেকে একটা পুরনো বই উঠাল। বইটির উপর রক্তের দাগ ছিল। সে বইটি খোলার সাথে সাথে, গম্ভীর এক কণ্ঠ শুনতে পেলো, "তোমরা এখান থেকে চলে যাও, নইলে..."

মিরাজ বললো, "আর তো অনেক দূর এগোতে পারবো না, তবে এই রহস্যটা কি ছিল?"

মেসবা বইটি খুলতেই, চারপাশে ভুতুরে এক আলো ফুটে উঠলো এবং চারপাশের অন্ধকার ছিন্ন হয়ে গেলো। তখনই তারা বুঝলো, যে তারা এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একটা শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে।

পরবর্তীতে তাদের জীবনে, ঐ ঘটনার পর থেকে, ভুতের গল্প যেন তাদের পিছু ছাড়লো না। তারা একে অপরকে সতর্ক করে বলতো, "যতটুকু সম্ভব, অন্ধকারে বেশি না থাকাই ভালো!"


ঘটনার পরের দিন সকালবেলা, মিরাজ, রিমো, আলিফ, আর মেসবা একসঙ্গে বসে আগের রাতের ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করছিল। তারা এখনো বিশ্বাস করতে পারছিল না, সত্যিই কী হয়েছিল!

মিরাজ বললো, "কাল রাতে যা হলো, সেটা স্বপ্ন ছিল না, তাই তো?"

রিমো কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, "স্বপ্ন হলে এতটা ভয় পেতাম না... ওই সাদা ছায়া, সেই কণ্ঠস্বর... ওগুলো একদম বাস্তব ছিল!"

মেসবা হাতের সেই পুরনো বইটা দেখিয়ে বললো, "এই বইটার ভেতর নিশ্চয়ই কোনো রহস্য আছে। আমাদের এটা খুঁজে বের করতে হবে!"

আলিফ মাথা নেড়ে বললো, "কিন্তু কীভাবে? এটা তো দেখতে একেবারে প্রাচীন, আর এর ভাষাগুলোও ঠিকমতো পড়া যাচ্ছে না!"

মিরাজ একটু ভেবে বললো, "আমার দাদু ইতিহাসের অনেক বই পড়েছেন, উনি হয়তো বুঝতে পারবেন!"

তারা বইটা নিয়ে মিরাজের দাদুর কাছে গেলো। দাদু বইটি হাতে নিয়ে চোখ কুঁচকে তাকালেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, "এটা এক অভিশপ্ত বই! অনেক বছর আগে এই এলাকায় এক সাধক থাকতেন। তিনি এই বইয়ে এক আত্মাকে বন্দি করেছিলেন। কিন্তু কোনো একসময়, কেউ বইটি খুলে ফেললে সেই আত্মা মুক্ত হয়ে যায়..."

এই কথা শুনে রিমো আতঙ্কিত হয়ে বললো, "তাহলে কি আমরা বইটা খুলে ভুল করে ওকে মুক্ত করে দিয়েছি?"

দাদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, "হতে পারে! কিন্তু এখন যা হয়েছে, সেটা ঠিক করতে হবে। নইলে সেই আত্মা তোমাদের বারবার ভয় দেখাতে থাকবে, কিংবা আরও ভয়ঙ্কর কিছু ঘটাতে পারে!"

মেসবা একটু ভয় পেয়েও বললো, "তাহলে কী করতে হবে, দাদু?"

দাদু বললেন, "বইয়ের শেষ পাতায় যদি কোনো মন্ত্র লেখা থাকে, তাহলে সেটাই হয়তো আত্মাকে আবার বন্দি করতে পারবে। তোমরা এখনই গিয়ে দেখে এসো!"

তারা চারজন আবার সেই জঙ্গলে ফিরে গেলো, বুক কাঁপতে কাঁপতে পুরনো বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। হঠাৎই একটা ঠান্ডা বাতাস বইতে লাগলো, যেন কেউ তাদের অপেক্ষায় আছে!

মিরাজ ফিসফিস করে বললো, "শুধু চটপট বইটা খুলে শেষ পাতাটা দেখবো... ব্যস!"

কিন্তু ঠিক তখনই, একটা বিকট আওয়াজ করে দরজা আপনাআপনি খুলে গেল! ভিতর থেকে একটা অদ্ভুত ছায়া বেরিয়ে এলো, আর এক গম্ভীর কণ্ঠ বললো, "তোমরা আমাকে মুক্ত করেছ, এখন কোথায় যাবে?"

রিমো চিৎকার করে উঠলো, "এবার তো আমরা শেষ!"

তখনই মেসবা দ্রুত বইয়ের শেষ পাতাটা খুলে দেখলো। সেখানে পুরনো সংস্কৃত ভাষায় কিছু লেখা ছিল।

আলিফ বললো, "আমাদের দাদুর কাছে এটা নিয়ে যেতে হবে!"

কিন্তু দেরি করার সময় নেই! ছায়াটা ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসছিল...


ছায়াটা ধীরে ধীরে তাদের চারপাশ ঘিরে ফেলছিল। বাতাস হিমশীতল হয়ে গিয়েছিল, যেন চারদিকে মৃত্যু ভেসে বেড়াচ্ছে। রিমো আতঙ্কিত হয়ে বললো, "এবার আমাদের কেউ বাঁচাতে পারবে না!"

কিন্তু মিরাজ হাল ছাড়েনি। সে চিৎকার করে বললো, "মেসবা, দ্রুত শেষ পাতার লেখা পড়ো! এটা হয়তো আত্মাকে থামাতে পারবে!"

মেসবা দ্রুত বইয়ের শেষ পাতার দিকে তাকালো। যদিও ভাষাটা একেবারেই পুরনো, তবুও শব্দগুলো অদ্ভুতভাবে যেন তার মাথায় নিজে থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল! সে কাঁপতে কাঁপতে মন্ত্র উচ্চারণ করতে লাগলো—

"ওম নমঃ কালোছায়া বন্ধনং, সংহারং শক্তি প্রহরণং!"

মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথেই পুরো বাড়িটা কেঁপে উঠলো! বাতাস আরও জোরে বইতে লাগলো, যেন একটা ঝড় উঠেছে! সেই অদ্ভুত ছায়া কষ্টে আর্তনাদ করতে লাগলো।

"না! তোমরা এটা করতে পারো না! আমি মুক্তি চাই!"

কিন্তু মেসবা থামলো না। সে বারবার মন্ত্র পড়তে লাগলো। হঠাৎ বই থেকে এক প্রবল আলো ছড়িয়ে পড়লো, আর সেই ছায়াটা ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে বইয়ের ভেতর ঢুকে গেল!

চারপাশে সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে এলো। বাতাস শান্ত হলো, রাতের নীরবতা ফিরে এলো।

রিমো ধপ করে মাটিতে বসে পড়লো, "আমরা... আমরা কি বেঁচে গেলাম?"

মিরাজ হাঁপাতে হাঁপাতে বললো, "হ্যাঁ... মনে হয় এটা শেষ!"

তারা ধীরে ধীরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো, আর ফিরে তাকিয়ে দেখলো, সেই পুরনো বাড়িটা আবার আগের মতো অন্ধকার আর নিরব হয়ে গেছে।

মেসবা বইটা শক্ত করে ধরে বললো, "এখন এটা একদম নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে, যাতে কেউ আবার ভুল করে এটাকে না খোলে!"

পরের দিন, তারা দাদুর কাছে ফিরে গেলো। দাদু সব শুনে মাথা নেড়ে বললেন, "তোমরা এক ভয়ংকর বিপদ থেকে ফিরে এসেছো। এই বই এখন এমন জায়গায় লুকিয়ে রাখতে হবে, যেখানে কেউ কোনোদিন খুঁজে পাবে না!"

তারা বইটাকে গ্রামের এক পুরনো মন্দিরের গোপন কক্ষে রেখে এলো, যেখানে শত বছর ধরে কেউ যায় না।

এরপর থেকে, মিরাজ, রিমো, আলিফ, আর মেসবা আর কখনো ভয়ঙ্কর কিছুর পেছনে যাওয়ার কথা ভাবেনি। তবে মাঝে মাঝে, রাতে তারা এক অদ্ভুত শীতল বাতাস অনুভব করতো, যেন কেউ তাদের ওপর নজর রাখছে...

(সমাপ্ত)

পরের গল্প পড়তে চাইলে পড়তে পারেন


ভৌতিক গল্প সম্পর্কিত কীওয়ার্ড:

  • ভুতের গল্প
  • বাংলা ভূতের গল্প
  • ভয়ংকর অভিজ্ঞতা
  • হরর স্টোরি ইন বাংলা
  • ভূতের কাহিনী
  • বাংলা হরর নোভেল

গল্পের থিম অনুযায়ী কীওয়ার্ড:

  • অভিশপ্ত বই
  • ভৌতিক বই
  • পরিত্যক্ত বাড়ির রহস্য
  • বাংলা গোপন রহস্য
  • ভয়ংকর রাতের গল্প
  • ভূতের কবলে

SEO ও ট্রেন্ডিং কীওয়ার্ড:

  • ভূতের গল্প PDF
  • Haunted Book Mystery
  • Scary Story in Bengali
  • Paranormal Bengali Stories
  • Horror Thriller Story


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url