ভূতুড়ে রাতের প্রতিশোধ || ভূতের গল্প || ভয়ংকর গল্প
![]() |
ভূতুড়ে রাতের প্রতিশোধ || ভূতের গল্প || ভয়ংকর গল্প |
ভূতুড়ে রাতের প্রতিশোধ
রাত তখন প্রায় ১টা। নির্জন পাহাড়ি রাস্তা ধরে মোটরসাইকেল চালিয়ে ফিরছিল আরাফ। চারপাশ নিস্তব্ধ, শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিল সে, কিন্তু রাস্তা একদম ফাঁকা দেখে অস্বস্তি লাগছিল।
একা একা আসতে আসতে হঠাৎই সামনের রাস্তার ধারে একটা সাদা ছায়ামূর্তি দেখতে পেল সে। একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, লম্বা সাদা জামা পরে, মাথার চুল এলোমেলো। মেয়েটি হাত তুলে ইশারা করল দাঁড়ানোর জন্য।
আরাফ প্রথমে থামতে চায়নি, কিন্তু কেমন যেন অদৃশ্য শক্তিতে তার শরীর জমে গেল। বাইক থামিয়ে সে জিজ্ঞেস করল, "আপনি এখানে এত রাতে একা?"
মেয়েটি ধীরে ধীরে তার দিকে ঘুরে তাকাল। ঘুরতেই তার চোখদুটো লাল হয়ে উঠল, মুখটা বিকৃত হয়ে গেল। গলাটা কাটা, রক্ত ঝরছে!
আরাফ চিৎকার করে বাইক চালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু বাইক স্টার্ট নিচ্ছে না! মেয়েটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল।
"আমাকে চিনতে পারলে?" মেয়েটি ফিসফিস করে বলল।
আরাফ বিস্মিত হয়ে দেখল, এই মেয়েটিকে সে আগে কোথাও দেখেছে! হ্যাঁ, ঠিক মনে পড়ল! গত বছর এই জায়গাতেই এক মেয়েকে সে তার বন্ধুদের সঙ্গে মিলে জোর করে বাইক থেকে ফেলে দিয়েছিল… সেই মেয়েটি ভয় পেয়ে রাস্তার পাশে খাদে পড়ে গিয়েছিল!
আরাফের শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেল।
মেয়েটি এবার বিকট হাসি দিয়ে বলল, "তুমি কি ভেবেছিলে, আমি ফিরে আসব না?"
এরপর... শুধু একটি বিকট চিৎকার শোনা গেল, তারপর সব নীরব হয়ে গেল।
পরদিন সকালে স্থানীয় লোকজন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটা বাইক পেল, কিন্তু আরাফের কোনো খোঁজ মিলল না। লোকজন শুধু দেখল, রাস্তার ধারে এক জায়গায় শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ...
কেউ জানল না, সেই রাতে আসলে কী হয়েছিল। কিন্তু সেই জায়গা দিয়ে রাতে আর কেউ একা যেতে সাহস করে না!
ভূতুড়ে রাতের প্রতিশোধ (পরবর্তী ঘটনা)
আরাফের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল। পুলিশ তদন্ত করল, কিন্তু কোনো সূত্র পেল না। তার পরিবার ও বন্ধুরা পাগলের মতো খুঁজতে লাগল, কিন্তু কোথাও কোনো হদিস নেই।
তারপর একদিন, গ্রামের এক বয়স্ক লোক সবাইকে ডেকে বললেন, "এই জায়গায় আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে! কয়েক বছর পরপর এখানে কেউ না কেউ নিখোঁজ হয়ে যায়!"
কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটল এক সপ্তাহ পর।
একজন রাখাল রাতে পাহাড়ের কাছের সেই রাস্তায় গরু চড়াতে গিয়ে হঠাৎ রাস্তার পাশে একটা পুরনো কুয়োর মধ্যে কিছু একটা ভাসতে দেখল। প্রথমে মনে হলো কোনো পোশাক, কিন্তু কাছে যেতেই সে দেখতে পেল— আরাফের নিথর দেহ কুয়োর পানিতে ভাসছে!
তার চোখদুটো খোলা, মুখ হা করা, যেন কোনো কিছু দেখে চরম আতঙ্কে মারা গেছে! সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার ছিল— তার গলার একপাশে গভীর আঁচড়ের দাগ ছিল, আর হাতে আঁকিবুঁকি করা অদ্ভুত কিছু চিহ্ন, ঠিক সেই মেয়েটির হাতের মতো!
পুলিশ যখন লাশ উদ্ধার করল, তখন সবাই অবাক হয়ে দেখল আরাফের মোবাইলে শেষবার যে ছবি তোলা হয়েছিল, তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেই সাদা পোশাকের মেয়েটি!
কিন্তু… পুলিশ ও তদন্তকারী দল যখন মোবাইলটা চালু করল, ছবি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল!
এরপর থেকে রাতের বেলা ওই রাস্তা দিয়ে কেউ একা গেলে মাঝে মাঝে শুনতে পায় একটা মেয়ের কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ— "আমার বিচার চাই..."
কেউ কেউ আবার রাস্তার ধারে ধূসর একটা ছায়া দেখে, কিন্তু সামনে গেলে কিছুই থাকে না।
আজও সেই রাস্তা দিয়ে যারা একা যায়, অনেকেই ফিরে আসে না। আর যারা বেঁচে ফেরে, তারা সারাজীবনের জন্য পাগল হয়ে যায়!
ভূতুড়ে রাতের প্রতিশোধ (চূড়ান্ত পরিণতি)
আরাফের মৃত্যুর পর থেকেই তার পরিবারে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। তার ঘর থেকে প্রায়ই গভীর রাতে কারো ফিসফিস করার শব্দ ভেসে আসত। মা-বাবা প্রথমে ভেবেছিলেন শোকের কারণে মনের ভুল হচ্ছে, কিন্তু একদিন আরাফের ছোট বোন নীলা আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার করে উঠল—
"মা! দাদার ঘরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে!"
পরিবারের সবাই ছুটে গেল, কিন্তু ঘরে কেউ নেই। তবু দেয়ালের আয়নায় যেন একটা ছায়া কাঁপছিল!
ধীরে ধীরে পুরো গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ল। অনেকে বলতে লাগল, এই ভূত শুধু আরাফকে মারেনি, তার পুরো পরিবারকে ধ্বংস করতে এসেছে!
এক রাতে আরাফের বাবা যখন বারান্দায় বসে ছিলেন, তখন বাতাস একেবারে থমকে গেল। রাতের নীরবতা ফুঁড়ে বেরিয়ে এল একটা শীতল ফিসফিস—
"বিচার চাই..."
তিনি চমকে উঠে দেখলেন, সামনের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে সেই ভয়ংকর মেয়ে!
পরদিন সকালে বাড়ির সবাই বাবাকে অচেতন অবস্থায় খুঁজে পেল। জ্ঞান ফেরার পর তিনি থরথর করে কাঁপছিলেন। শুধু ফিসফিস করে বললেন—
"আমাদের সবাইকে ও নিয়ে যাবে... ক্ষমা চাও... নাহলে কেউ বাঁচবে না!"
তন্ত্র-মন্ত্র আর চূড়ান্ত সত্য
অবস্থা বেগতিক দেখে গ্রামের পুরোহিত ডাকা হলো। তিনি বাড়িতে এসে চারদিকে নজর বোলানোর পর বললেন—
"তোমরা একটি মহা অপরাধ করেছ! এ আত্মা শুধু প্রতিশোধই নয়, ন্যায়বিচারও চাইছে!"
অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা গেল, যেই মেয়েটি ভূত হয়ে ফিরে এসেছে, তার নাম ছিল সায়মা। সে বছরখানেক আগে এই রাস্তার ধারে এক দুর্ঘটনায় মারা যায়। কিন্তু সত্যি কথা হলো, সেটি কোনো দুর্ঘটনা ছিল না— কিছু যুবক তাকে ভয় দেখিয়ে ধাক্কা দেয়, আর সে পাহাড়ি খাদে পড়ে যায়।
আরাফ ছিল সেই ছেলেদের একজন।
পুরোহিত বললেন, "যদি তার আত্মাকে মুক্তি না দাও, তবে এই গ্রাম অভিশপ্ত হয়ে যাবে!"
পরদিন সবার সামনে আরাফের বাবা-মা এবং তার বন্ধুরা সায়মার পরিবারের কাছে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চাইল। তারা তার আত্মার শান্তির জন্য গ্রামের মন্দিরে বিশেষ পূজা দিল।
এরপর কয়েক রাত শান্ত থাকল। কেউ আর কাঁদার শব্দ শুনল না, কেউ ভূতের ছায়া দেখল না।
শেষ রাতের রহস্য
কিন্তু এক রাতে, ঠিক তিনটের সময়, আরাফের মা হঠাৎ শুনতে পেল দরজায় কে যেন কড়া নাড়ছে।
টক… টক… টক…
ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তিনি দরজা খুললেন, কিন্তু বাইরে কেউ নেই।
শুধু এক জায়গায় রক্ত দিয়ে লেখা—
"আমি ফিরে আসব…"
এরপর থেকে আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ঘটেনি, কিন্তু সেই রক্তের দাগ কখনো মুছে যায়নি… এবং গ্রামের লোকেরা জানে, সে সত্যিই একদিন ফিরে আসবে…